বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

শিশুর জ্ঞান বিকাশ

 শিশুর জ্ঞান বিকাশ


একটি শিশুর ভুমিষ্ট হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় তার শিক্ষা জীবন। তার প্রতিটি অঙ্গের সঞ্চালনে রয়েছে শিক্ষা। সুস্থ, স্বাভাবিক, সবল শিশু এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে। এরা সব সময় অনুকরনপ্রিয় হয়ে থাকে। তাই প্রতিটি শিশুর মা-বাবাকে সচেতন থাকতে হয় যেন শিশুর প্রতি তাদের আচরণ হয় মার্জিত। কথা ও অঙ্গ সঞ্চালনে যে কোন প্রকার নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে। মা ও পরিবারের স্বজনদের দেখে তার হাত, পা, নড়াচড়ার চেষ্টা করে। মুখ ও চোখের ভঙ্গিমা দেখে হাসে, ভয়পায় অথবা কাঁদে। মায়ের আদর ভালবাসা পেলে তারা আনন্দিত হয়। অন্যদের হাঁটা-চলা দেখে বয়স অনুপাতে তারাও সেভাবে চেষ্টা করতে থাকে। এভাবে এক সময় তারা সফলকাম হয়। এর পর শুরু হয় আধো আধো কথা বলার অনুকরন। মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা, দাদী ও স্বজনদের কথা বলার সময় এরা তা পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করে এবং সেই ভঙ্গিমায় তারা সেগুলোকে অনুকরন করে কথা বলার চেষ্টা করে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে শিশুর শিখনে পুরাতনের সাথে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এতে শিশুরা নতুন নতুন শব্দ ও যন্ত্রের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেমন, মেমোরী শব্দটির সাথে এখন প্রায় সবাই পরিচিত। এটি হলো স্মৃতিকে ধারণ করে রাখার একটি মাধ্যম। মানব মস্তিস্ক হলো এমন একটি যন্ত্র যার মাঝে এরকম মেমোরী রয়েছে, যেখানে শিশু কাল থেকেই তথ্য জমা হতে থাকে। বর্তমানে প্রচলিত মেমোরীকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি স্থায়ী (রম) আর অন্যটি অস্থায়ী (র‌্যাম)। স্থায়ী মেমোরী সাধারণত কম্পিউটার ল্যাপটপ ইত্যাদিতে হার্ডডিস্ক, ডিভিডি, এস এস ডি কার্ড ও মেমোরী কার্ডে থাকে। মানব মস্তিস্কে থাকে স্মৃতি কোষ। এগুলোই যাবতীয় তথ্য জ্ঞান হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখে। যার স্মৃতি কোষ যত সতেজ ও সক্রিয় থাকে তারা তত বিদ্যান ও জ্ঞানী হয়ে থাকে। অস্থায়ী স্মৃতি (র‌্যাম) হলো এক ধরণের মাধ্যম যেখানে স্থায়ী স্মৃতির (রম) কিছু তথ্য কিছু সময়ের জন্য সেখানে এসে জমা হয়ে তাকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে। একটি তথ্য পরিবেশন কত দ্রুত বা প্রখর হবে তা এর ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রে যাকে আমরা র‌্যাম বলি সেটিই হলো এই মাধ্যম। রমে যদি কোন তথ্য না থাকে তা হলে র‌্যাম কোন কাজে আসে না। ধরা যাক, কেউ কোন সমুদ্র পাড়ে বা কোন ঐতিহাসিক স্থানে বেড়াতে গেল। সেখানে সে যা দেখল বা পর্যবেক্ষণ করল তা তার স্মৃতিতে জমা হলো। মজার বিষয় হলো আমাদের স্মৃতি যা জমা থাকে তা সবসময় আমরা মনে করি না বা করতে পারি না। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে অনেক তথ্য আমাদের স্মৃতিতে জমা হয়ে থাকে। সব তথ্যকে এক সাথে মনে করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। মস্তিস্কের স্থায়ী স্মৃতিকোষ তথ্য জমা রাখলেও তা পরিবেশন বা উপস্থাপন করতে পারে না। পরিবেশন বা উপস্থাপনের জন্য সহায়তা করে থাকে অস্থায়ী স্মৃতি কোষ (র‌্যাম)।অস্থায়ী স্মৃতি কোষ কি পরিমাণ তথ্য উপস্থাপন করতে পারবে তা নির্ভর করে এর ধারণ করার ক্ষমতার উপর। উপস্থাপনকৃত তথ্যের মধ্যে একটি তথ্য সক্রিয় থাকবে বাকিগুলো সাময়িক নিস্ক্রিয় থাকে। জমাকৃত তথ্য মস্তিস্ক বিশ্লেষণ করে সেটিকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগায় এবং তা উপস্থাপন করে। যার র‌্যামের পরিধি যত বেশি তার তথ্য পরিবেশনের ক্ষমতাও তত বেশি।  আর এরাই বুদ্ধিমত্তা ও কলাকৌশলে এগিয়ে থাকে। শিশুর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে স্মৃতি কোষের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কোষের সক্রিয়তা নির্ভর করে তার শারিরীক অবস্থা, বয়স, খাদ্য, পরিবেশ ইত্যাদির উপর। একজন শিশু কোন কিছু দেখলে বা স্বজনদের কাউকে দেখলে মেমোরী থেকে তথ্য র‌্যামে এনে তা বিশ্লেষণ করতে থাকে। সংরক্ষিত তথ্যের সাথে বস্তু বা ব্যাক্তির যদি তথ্য মিলে যায় তবেই সে তা চিনতে পারে। অন্যথায় সে শুধু হা করে তাকিয়ে থাকে। চেনা জিনিষ বা স্বজনকে যদি চিনতে না পারে তাহলে বুঝতে হবে তথ্য তার মেমোরী থেকে মুছে গেছে বা তা সে ধারণ করতে পারে নাই। তথ্য ধারণের ক্ষেত্রে যদি বার বার একই দেখা দেয় তা হলে বুঝে নিতে হবে তার মস্তিস্কের ধারণ ক্ষমতা স্বাভাবিক নয়। এ অবস্থায় বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। শিশুর মাস্তিস্কের ধারণ ক্ষমতা অস্বাভাবিক হওয়ার দু’টি কারণ হতে পারে, ১. জন্মগত ত্রুটি, ২. পরিবেশগত কারণ। জন্মগত ত্রুটি চিকিৎসার মাধ্যমে ভাল হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। পরিবেশগত কারণ নির্ভর করে পারিবারিক কর্মকারণ্ডের উপর। উপরোক্ত দু,টি কারণের শিশুদের আমরা বুদ্ধি প্রতিবন্ধি হিসেবে ধরে থাকি। শিশুর মস্তিস্কের অকার্যকারিতাই এর জন্য দায়ী। কোন শিশু যদি কোন কিছু বুঝতে না পারে বলতে না পারে চিনতে না পারে তার জন্য তাকে দোষী না করে এর কারণ নির্ণয় করার চেষ্টা করতে হবে। আর এটি করা প্রত্যেক মা-বাবার অপরিহার্য দায়িত্ব। তাদের অবহেলার জন্যে একটি শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিপতিত হতে পারে।

একটি শিশু বড়দের নিকট থেকে যে তথ্য পেয়ে মস্তিস্কে সংরক্ষণ করে সেটাই হলো তার জ্ঞান। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এগুলো থেকে তথ্য নিয়ে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। আধুনিক কম্পিউটারের তথ্য জমা থাকে হার্ড ডিস্ক বা মেমোরীতে ফাইল আকারে আর মানুষের ক্ষেত্রে তা থাকে মস্তিস্কে। যেগুলোকে স্থায়ী স্মৃতি বলা হয়ে থাকে। স্থায়ী স্মৃতির তথ্যগুলোকে হার্ড ডিস্ক বা মস্তিস্ক সরাসরি ব্যবহার করতে পারে। বাস্তবে দেখা যায় অগণিত তথ্যের মধ্যে উভয় ক্ষেত্রে কেবল একটি মাত্র তথ্যই সক্রিয় থাকে। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাপ, মোবাইল ইত্যাদির ক্ষেত্রে বাটন বা ট্যাব প্রেস করে কোন একটি প্রোগ্রাম সক্রিয় বা চালু করা যায়। এ কাজটি করার জন্য এক অপারেটরের প্রয়োজন হয়। কম্পিউটার বা মোবাইলের ক্ষেত্রে অস্থায়ী স্মৃতি বা র‌্যাম প্রয়োজন হয়। যে ডিভাইসে র‌্যামের পরিধি যত বেশি, সেটি তত দ্রুত তথ্য পরিবেশন করতে পারে। র‌্যাম কম হলে তথ্য পেতে সময় লাগে। জবরদস্তি কাজ করতে চাইলে ডিভাইস হ্যাং হয়ে যায়। স্থায়ী মেমোরীর যে ফাইল বা তথ্য ক্লিক বা প্রেস করা হয় কেবল সেই ফাইলটিই র‌্যামে এসে মনিটরে প্রদর্শন করে। মনিটরে থাকা তথ্য, সামনে থাকা যে কেউ দেখতে পারে। একাধিক ফাইল র‌্যামে থাকলেও সক্রিয় থাকে একটি।

মানব মস্তিস্কের স্থায়ী স্মৃতি থেকে তথ্য পাওয়ার জন্য কোন বাটন ক্লিক করতে হয় না। এ ক্ষেত্রে অদৃশ্য একটি শক্তি কাজ করে। যাকে আমরা মন বলি। মন যে ফাইলের উপর ক্লিক মারে কেবল সেই ফাইলটিই অস্থায়ী মেমোরীতে (র‌্যামে) এসে জমা হয়। তখন একে আমরা বলি মনে করা। যে মনে করে সেই কেবল মনের মনিটরে সেই ফাইলের তথ্য দেখতে পারে। পাশে থাকা কারো পক্ষে তা দেখা বা জানা সম্ভব নয়। তবে মনে করা ব্যাক্তির আচরণ বা বৈশিষ্ট্য থেকে কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। মানব মস্তিস্কের অস্থায়ী স্মৃতি কোষ যত বেশি সুস্থ ও  সক্রিয় থাকে তা তত বেশি তথ্য ধারণ করতে পারে। দুর্বল ও অসুস্থ কোষ তাড়াতাড়ি তথ্য পরিবেশন করতে পারে না। তাই তাদের ক্ষেত্রে কোন কিছু মনে করতে অনেক সময় লাগে বা একে বারে মনেই করতে পারে। আবার অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মনে করার চেষ্টা করলে মাথা গরম হয়ে যেতে পারে। এই প্রক্রিয়া বার বার চলাতে থাকলে উম্মাদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোন পরিবারে বা রাস্তা-ঘাটে যত মানষিক বিকারগ্রস্থ লোক দেখা যায় প্রত্যেকের পিছনে এই ধরণের কোন না কোন কারন থাকে।

মানুষের মেমোরীতে যে তথ্যগুলো সংরক্ষিত হয় তা হলো, অডিও, ভিডিও, স্বাদ, গন্ধ, অনুভুতি। এই সকল তথ্য সংগ্রহের জন্য শিশু কান, চোখ, মুখ, নাক, জিহবা, ত্বক, হাত, পা ইত্যাদি ব্যবহার করে। আধুনিক যুগের ডিজিটাল ডিভাইসের তথ্য সংগ্রহের সাথে এদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

কান: শিশুর তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কান একটি গুরুত্বপুর্ণ অংগ। শিশু যত শব্দ, ধ্বনি বা কথা শোনে উৎস পর্যবেক্ষণ করে সেগুলোকে মেমোরীতে সংরক্ষণ করে। এ ধরনের শব্দ বা কথা শুনলে জমাকৃত তথ্যের সাথে ম্যাচিং করে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে। অন্ধ শিশু চোখে না দেখলেও শব্দ বা কথা বলার স্বর, ভঙ্গি বিশ্লেষণ করে এর উৎস সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে পারে। পুর্ব জ্ঞান  না থাকলে ধারণা দিতে পারে না। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে কানকে মাইক্রোফোনের সাথে তুলনা করা যায়। কিন্তু মাইক্রোফোন কখনই কানের সমতুল্য হতে পারে না। কারণ শব্দ সংরক্ষণকারী যন্ত্রের সাথে সংযোগ দিলেই সেখানে শব্দ বা তথ্য সংরক্ষিত হয়। কিন্তু কানের সাথে সংযোগ দেওয়ার মতো কোন তার বা সংযোগ সকেট নেই। এখানে সংযোগ দেওয়ার জন্য যে মাধ্যম কাজ করে তা হলো মন নামক অদৃশ্য সুইচ। কারও কান তথ্য সংগ্রহ করবে কী করবে না তা এই মনই নিয়ন্ত্রন করে থাকে। মন পরিচালিত হয়ে থাকে শিশুর নফসের দ্বারা। কাজের শিশুর তথ্য সংগ্রহ নির্ভর করছে মন পরিচালনাকারীর উপর। শিশু যে শব্দ বা কথার প্রতি মন যোগ করবে কেবল সেই তথ্যটিই তার মেমোরীতে সংরক্ষিত হবে। পরিবেশের চারপাশে অনেক কথা ও শব্দ হয় কিন্তু সব্গুলোই আমাদের মেমোরীতে জমা হয় না। এক মাত্র মনোযোগ দেওয়া শব্দটিই আমাদের মেমোরীতে জমা হয়। দু’জন ব্যাক্তি গভীর মনোযোগ সহকারে কথা বলার সময় তাদের কাছ দিয়ে কেউ উচ্চস্বরে কথা বলে গেলেও সেই কথা তাদের মেমোরীতে সংরক্ষিত হয় না।পরবর্তীতে তাদের যদি বলা হয় যে লোকটি উচ্চস্বরে কী বলেছে। তাদের কাছে সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে না। বিদ্যালয়ে শিক্ষক সবার সামনে শিক্ষনীয় একই তথ্য উপস্থাপন করেন। কিন্তু পরে সেই তথ্য প্রসঙ্গে এক এক করে সবাইকে জিজ্ঞাসা করলে সবার কাছে সমান উত্তর পাওয়া যায় না। এর মূল কারণ হলো কানে সুইচ সঠিক যায়গায় সংযোগ দেওয়া হয়নি। যাদের কান সুস্থ সবর তাদের ক্ষেত্রে এই অবস্থা হলে, যাদের কান বধির তাদের অবস্থা কী হবে? শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে অনর্গল পাঠদান করে মনে করেন আজ অনেক কিছু শিখালাম। কিন্তু বাস্তবে কি তাই ঘটেছে? না। যারাই শিক্ষকের প্রতি মনোযোগী ছিল তারাই কিছু শিখতে পেরেছে। যারা দরজা, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছে, যারা সহপাঠীদের সাথে কথা বলেছে, যারা অন্যের সাথে দুষ্টামী করেছে, যারা অন্যের দিকে তাকিয়ে ছিল তারা কিছুই শিখতে পারে নাই। বাস্তবে তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে কোন উত্তর পাওয়া যাবে না। তাই শ্রেণিকক্ষে যেটি অতি গুরুত্বপুর্ণ তা হলো শিক্ষকের কথার প্রতি শিক্ষার্থীর কানের গভীর সংযোগ। সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেই শিখন কার্যক্রম ব্যর্থ। যে সব শিশুর কানে সমস্যা আছে অর্থাৎ কানে শোনে না বা কম শোনে তাদের চিকিৎসা করে এর প্রতিকার করা গুরুত্বপুর্ণ। তা না হলে তাদের দ্বারা শব্দগত কোন শিখন সম্ভব নয়। তাদের সাংকেতিক চিহ্ন বা শব্দ ব্যবহার করে শিখাতে হব।

চোখ: মানুষের চোখকে ভিডিও ধারন করার ডিভাইসের সাথে তুলনা করা যায়। ক্যামেরা যেমন ছবি তুলতে পারে ও ভিডিও রেকর্ডিং করতে সহায়তা করে ঠিক তেমনি চোখ দিয়ে শিশু ছোট থেকে মা, বাবা, ভাই, বোন ও স্বজনদের ছবি বা তথ্য মেমোরীতে ধারণ করে রাখে। কাউকে দেখলে মেমোরীতে রাখা তথ্য বিশ্লেষণ করে কে সে? মেমোরীর ছবি ভিডিও বা তথ্যের সাথে ম্যাচিং হলেই কেবল তাকে চিনতে পারে। যাদের প্রতিনিয়ত দেখছে তারপরও যদি তাদের চিনতে না পারে তাহলে ধরে নিতে হবে চোখে কোন সমস্যা হয়েছে। কারণ বস্তুর প্রতিবিম্ব যদি চোখের রেটিনার উপর যথাযথভাবে না পড়ে তাহলে শিশু স্পষ্ট দেখতে পাবে না। সঠিক প্রতিবিম্ব তৈরি না হওয়ার কারণ হলো চোখের লেন্স অথবা গোলকের আকৃতি। কোন শিশু কিছু দেখার পর যদি তার সঠিক বিবরণ দিতে না পারে তবেই বুঝতে হতে তার চোখে ত্রুটি আছে অথাব তথ্য মেমোরীতে সংরক্ষণ হয়নি। কিছু শিক্ষার্থী বোর্ডে আঁকলে বা লিখলে দুর থেকে কিছুই দেখে না। আবার কেউ কাছ থেকে দেখে না। কেউ দেখল কিন্তু কি দেখল তা বলতে পারে না। শিশুকে শিক্ষা দেওয়ার আগে তার দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষা করা দরকার। কারো চোখের ত্রুটির প্রাথামিক অবস্থা হলে তা খুব সহজে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা যায়। কিন্তু যত দিন যায় তত তা জটিল আকার ধারণ করে। কোন কোন ক্ষেত্রে চশমা ছাড়া এর আর কোন বিকল্প পথ খুঁজে পাওয়া যায় না। চোখের অবস্থা ভালো হওয়ার পরও যদি শিশু শিখতে না পারে বা মনে রাখতে না পারে তাহলে ধরে নিতে হবে সমস্যা অন্য জায়গায়। এর জন্য স্মৃতিশক্তি পরীক্ষা করতে হবে। শিশু পরিচিত স্বজনদের চিনতে না পারলে ধরে নিতে হবে তার স্মৃতি কোষ দুর্বল। এটা জন্মগত ত্রুটির কারণে হতে পারে অথবা আঘাত জনিত কারণে হতে পারে অথবা অসুস্থতা জনিত কারণে হতে পারে অথবা কোন মানষিক বা ঔষধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে। সাময়িক দুর্বল জনিত কারণে হলে সেটাকে চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে তোলা যায়। মেমোরীকোষ নষ্ট হলে তা চিকিৎসার মাধ্যমে সহজে সুস্থ করা যায় না। যেমন, বৃদ্ধ বয়সে অনেকের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে। তারা খাওয়ার পর খেয়েছে কি-না জিজ্ঞাসা করলে বলে খাইনি। কোন কিছু করার পর পরই ভূলে যায়। শিশুর ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটলে শিশুকে নির্বোধ বলে মনে হবে। পৃথিবীতে সব মানষিক প্রতিবন্ধীই এই ঘটনার শিকার। অত্যাধিক দুশ্চিন্তার এর অন্যতম কারণ।

নাক: নাক দিয়ে শিশু বিভিন্ন দ্রব্যের গন্ধ নিয়ে তার মেমোরীতে সংরক্ষণ করে। পরবর্তীতে অন্যান্য বস্তুর সাথে তুলনা করতে পারে। কোন শিশুর বস্তুর গন্ধ সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে সক্ষম না হলে বুঝতে হবে তার নাকে সমস্যা রয়েছে। অর্থাৎ নাকের সংবেদনশীলতা ঠিকমতো কার করছে না।

জিহবা: এর দ্বারা বিভিন্ন বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করে তা মেমোরীতে সংরক্ষণ করে। এতে খাবারের স্বাদ পাওয়া না গেলে বা অনুভব না হলে এতেও সংবেদশীলতার অভাব আছে ধরতে হবে।

নাক ও জিহবার দ্বারা তথ্য সংগ্রহে সাবধানী হওয়া দরকার। কারণ অনেক দ্রব্য রয়েছে যাদের স্বাদ বা গন্ধ বিষাক্ত। এগুলো গ্রহণের মাধ্যমে গ্রহণকারীর শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। তাই শিশুর ক্ষেত্রে এইসব দ্রব্যের বেলায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নাক, কান, জিহবা, চোখ, হাত, পা, ত্বক বর্তমান ডিজিটাল যুগের ইনপুট ডিভাইস হিসেবে কাজ করে। এগুলো দিয়েই যাবতীয় তথ্য-জ্ঞান মস্তিস্কে ঢুকে। মুখের শব্দ, হাতের অঙ্গভংগি ইত্যাদি আউটপুট হিসেবে কাজ করে। এগুলো দিয়েই আমরা আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করি।

একটি শিশুর শিখন কার্যক্রম কেমন হবে তা নির্ভর করে এই অঙ্গগুলির উপর। তাই শিশুর জ্ঞান সংগ্রহকারী সব অঙ্গ সক্রিয় আছে কিনা তা পরীক্ষা করে ত্রুটি দুর করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রত্যেক শিশুর বয়স ২/৩ বছর হলেই চারপাশে যা দেখে তা সম্পর্কে জানতে চায়। এটা কি ওটা কি এভাবে প্রশ্ন করে স্বজনদের ব্যস্ত রাখে। এ সময় ধৈর্য্যের সাথে সঠিক উত্তর দেওয়া চেষ্টা করতে হবে। এটিই তাদের জন্য ভালো। বিরক্তি বোধ করলে এ বিষয়টি তারা বুঝতে পারলে শিখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তখন থেকেই তাদের মধ্যে মান অভিমানের অনুভূতি কাজ করে।

শিশুর জানার আগ্রহ দেখে কেউ মনে করে তাকে বইয়ের বিদ্যা দেওয়ার সময় হয়েছে। এর পর বই দিয়ে তার উপর পড়া চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় ফলাফল হয় উল্টো। শিশুর শেখার আগের সেই আগ্রহ আর দেখা যায় না। জানার আগ্রহ থেকে নিজের গুটিয়ে ফেলে। পড়তে চায় না বই দেখলেই বিরক্তি বোধ করে। নানান অজহাতে বিষয়টিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। কোন কোন সময় অভিনয় বা মিথ্যার আশ্র্রয় নেয়। পড়ালেখায় মনোনিবেশ করানো যায় না।

শিশুর জ্ঞান বিকাশ

  শিশুর জ্ঞান বিকাশ একটি শিশুর ভুমিষ্ট হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় তার শিক্ষা জীবন। তার প্রতিটি অঙ্গের সঞ্চালনে রয়েছে শিক্ষা। সুস্থ, স্বাভাবি...